বিশেষ সংবাদদাতা, কলকাতা: শনিবার পঞ্চম দফার ভোট পশ্চিমবাংলায়। ভোট গ্রহণ হবে বরানগরেও। বুধবার ছিল রাজনৈতিক দলগুলির প্রচারের শেষ দিন। আর এদিনই সেখানে বিজেপি প্রার্থী তথা বাংলা সিনেমার অভিনেত্রী পার্নো মিত্রের মিছিলে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। চলতি ভোট পর্বে এই কেন্দ্রে রাজনৈতিক সঙ্ঘর্ষের ঘটনা বেড়ে চলায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে। তার মধ্যে এই ঘটনা নিয়ে তীব্র রাজনৈতিক চাপান–উতোর শুরু হয়েছে। বুধবার দুপুরে এই ঘটনার পর চরম উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। প্রার্থী–সহ বিজেপি নেতা এবং কর্মীরা ঘটনার প্রতিবাদে এবং দোষীদের গ্রেফতারির বরানগর থানার সামনে বিটি রোড অবরোধ করেন। যদিও হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। ভোটে এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী পার্নো মিত্রের সঙ্গে মূল লড়াই তৃণমূল প্রার্থী তাপস রায়ের।
বুধবার দুপুরে বরানগর পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সতীন সেন নগর এলাকায় প্রচারে যান বিজেপি নেতা–কর্মীরা। ছিলেন প্রার্থী পার্নোও। বিজেপি কর্মীরা বাইক নিয়ে ‘রোড শো’ করছিলেন। একটি গাড়িতে হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে ছিলেন পার্নো। সেই সময়ই তৃণমূলের স্থানীয় কর্মী–সমর্থকেরা অতর্কিতে হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, রোড শো আরসি বাজারে পৌঁছনোর পর রাস্তার পাশ থেকে তৃণমূল কর্মীরা লাঠি–সোটা নিয়ে তঁাদের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বেধড়ক মারধর করা হয় বিজেপি কর্মীদের। তাতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূলের হামলা থেকে রেহাই পাননি মহিলা কর্মীরাও। তাঁদেরও রাস্তায় ফেলে এলোপাথারি মারধর করা হয়। এমনকী, পার্নো মিত্রকেও শারীরিক হেনস্থার চেষ্টা করা হয়। ঘটনার পর পার্নোকে রীতিমতো কেঁদে ফেলতেও দেখা গিয়েছে। পার্নোও জানিয়েছেন, তাঁর ওপর হামলার চেষ্টা করা হয়েছে। কর্মীরা বাধা দেওয়ায় তারা তাঁর ক্ষতি করতে পারেনি।
ঘটনার প্রতিবাদে বরানগর থানার সামনে বিটি রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিজেপি কর্মীরা। তাঁদের দাবি, ঘটনায় দোষীদের গ্রেফতার করতে হবে। সেখানে পার্নো বলেন, ‘পরিকল্পিত ভাবে আমাদের প্রচারে হামলা করেছে তৃণমূল। আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে আক্রমণ করা হয়েছে। মহিলাদেরও মারা হয়েছে। আমাদের কর্মীদের তৃণমূল হুমকি দিচ্ছে, ২ মে–র পরে সবাইকে দেখে নেওয়া হবে। এটা আমরা কোন রাজ্যে বাস করছি। কোনও সভ্য জগতে এমন ঘটনা ঘটতে পারে না।’ যদিও তৃণমূল প্রার্থী তথা বিদায়ী বিধায়ক তাপস রায় হামলার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ভোটে বিজেপি হারছে। তারা তা বুঝতে পেরে গিয়েছে। তাই এখন নাটক করছে। বরং বিজেপি কর্মীরাই আমাদের কর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। এখানকার ১ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি কর্মীদের হামলায় আমাদের এক মহিলা নেত্রী আহত হয়েছেন।’ কিন্তু বুধবারের ঘটনার পর বরানগর থানায় বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন বিজেপি নেতারা।
উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালের পর প্রথম দিকে কংগ্রেস প্রভাবিত থাকলেও ছয়ের দশকের শেষ থেকে বরানগরে বাম প্রভাব বাড়তে থাকে। সাতের দশকে এই অঞ্চলে ভয়ঙ্কর সব রক্তক্ষয়ী সঙ্ঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তার পর ১৯৭৭ সাল থেকে পুরো অঞ্চলটিই বাম প্রভাবিত হয়ে পড়ে। টানা ৩৪ বছর সেই ধারা অব্যাহত ছিল। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যে পালাবদল ঘটলে এখানেও বাম প্রভাবের অবসান ঘটে। দশ বছর ধরে এই অঞ্চলে তৃণমূলেরই রমরমা। কিন্তু এ বছর তৃণমূলের সেই প্রভাবে থাবা বসিয়েছে বিজেপি। তাই ফের সঙ্ঘর্ষের ঘটনা এখানে বেড়ে গিয়েছে বলে ধারণা ওয়াকিবহাল মহলের। সেই কারণে এই কেন্দ্রে শনিবারের ভোট নির্বিঘ্নে করানোটা নির্বাচন কমিশনের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ বলে তারা মনে করছে।
আরও পড়ুন : অমিত শাহর সেই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী